চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, যা স্থানীয়ভাবে চট্টগ্রাম জু নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ স্থল। এটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ফয়স লেকের পাশে অবস্থিত। এই চিড়িয়াখানা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখির জন্য বিখ্যাত এবং চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি প্রিয় গন্তব্য।
চিড়িয়াখানার ইতিহাস
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রথমে একটি ছোট সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে শুরু হয়েছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ চিড়িয়াখানায় রূপান্তরিত হয়। চিড়িয়াখানাটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (CDA) এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
- প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ
- অবস্থান: ফয়স লেকের পাশে, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
- আয়তন: প্রায় ৬ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত
চিড়িয়াখানার আকর্ষণ
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পাখি রয়েছে। এখানে স্থানীয় এবং বিদেশি প্রজাতির প্রাণী ও পাখির প্রদর্শনী করা হয়, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
প্রধান আকর্ষণ
১. বাঘ (বেঙ্গল টাইগার): চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো বেঙ্গল টাইগার। চিড়িয়াখানায় বাঘের জন্য একটি বিশেষ এনক্লোজার তৈরি করা হয়েছে, যেখানে দর্শকরা নিরাপদ দূরত্ব থেকে বাঘের চলাফেরা এবং আচরণ দেখতে পারেন।
২. সিংহ: চিড়িয়াখানায় সিংহও রয়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। সিংহের গর্জন এবং চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করা দর্শকদের জন্য একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
৩. হরিণ: চিড়িয়াখানায় হরিণের একটি বড় দল রয়েছে। দর্শকরা হরিণদের চলাফেরা এবং খাওয়া-দাওয়া দেখতে পারেন। হরিণদের পরিবেশবান্ধব এনক্লোজারে রাখা হয়েছে, যা তাদের জন্য উপযুক্ত।
৪. নানা প্রজাতির পাখি: চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ময়ূর, তোতা, ঈগল, এবং অন্যান্য স্থানীয় ও বিদেশি পাখি। পাখিদের জন্য আলাদা অভয়ারণ্য রয়েছে।
৫. কুমির ও সাপ: চিড়িয়াখানায় কুমির এবং বিভিন্ন প্রজাতির সাপ রয়েছে। এগুলোকে আলাদা এনক্লোজারে রাখা হয়েছে এবং দর্শকদের জন্য এটি একটি বিশেষ আকর্ষণ।
অন্যান্য সুবিধা
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দর্শকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে:
- খেলাধুলার ব্যবস্থা: চিড়িয়াখানার পাশে ছোটখাটো খেলার মাঠ রয়েছে, যেখানে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারে।
- পিকনিক স্পট: চিড়িয়াখানার আশেপাশে পিকনিক করার জন্য বেশ কিছু সুন্দর স্থান রয়েছে, যেখানে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো যায়।
- গাইডেড ট্যুর: চিড়িয়াখানায় দর্শকদের জন্য গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে, যা চিড়িয়াখানার বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।
কিভাবে পৌঁছাবেন?
চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পৌঁছানো বেশ সহজ। শহরের যেকোনো স্থান থেকে রিকশা, সিএনজি বা প্রাইভেট গাড়িতে করে ফয়স লেকের দিকে যেতে পারেন। চিড়িয়াখানা ফয়স লেকের খুব কাছেই অবস্থিত, তাই এটি খুঁজে পাওয়া সহজ। চট্টগ্রাম শহর থেকে চিড়িয়াখানার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার, যা অল্প সময়ে পৌঁছানো যায়।
উল্লেখযোগ্য তথ্য: চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য একটি নামমাত্র প্রবেশ ফি রয়েছে। এটি প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে।
ভ্রমণের সময় যা মাথায় রাখা উচিত
১. পরিচ্ছন্নতা: চিড়িয়াখানার পরিবেশ পরিষ্কার রাখার জন্য কোন প্রকার আবর্জনা না ফেলুন এবং নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলুন।
২. নিরাপত্তা: চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের কাছাকাছি না যাওয়া এবং তাদের বিরক্ত না করার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করুন।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ স্থল। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাণীর বৈচিত্র্য, এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম একে পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলেছে। চট্টগ্রামে ভ্রমণে গেলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা অবশ্যই পরিদর্শন করা উচিত।
No Comment! Be the first one.