তিস্তা ব্যারাজ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ সেচ প্রকল্প, যা দেশের কৃষিখাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এটি রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা নদীর উপর অবস্থিত। তিস্তা ব্যারাজ দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, এবং নদীর পানির নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিস্তা ব্যারাজের ইতিহাস ও নির্মাণ
তিস্তা ব্যারাজের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে এবং এটি ১৯৯০ সালে সম্পূর্ণ হয়। ব্যারাজটি মূলত তিস্তা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ এবং দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়। এই প্রকল্পটি তিস্তা নদীর পানির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কৃষি জমিতে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করে।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
- নির্মাণকাল: ১৯৭৯-১৯৯০
- অবস্থান: হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট, রংপুর বিভাগ
- উদ্দেশ্য: সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, এবং নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ
তিস্তা ব্যারাজের কার্যকারিতা
তিস্তা ব্যারাজের মূল কাজ হলো তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা এবং সেচ সুবিধা প্রদান করা। ব্যারাজটি তিস্তা নদীর পানির প্রবাহকে বিভিন্ন খালে বিভক্ত করে, যা উত্তরবঙ্গের বৃহৎ কৃষি জমিতে সেচ প্রদান করে। এটি প্রায় ৭৫০,০০০ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে, যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
প্রধান বৈশিষ্ট্য
১. সেচ সুবিধা: তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৭৫০,০০০ হেক্টর জমিতে সেচের সুবিধা প্রদান করা হয়। এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
২. বন্যা নিয়ন্ত্রণ: ব্যারাজটি তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, যা বর্ষাকালে বন্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়। এটি বন্যা থেকে রক্ষা করার জন্য আশেপাশের এলাকাগুলির জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।
৩. বিদ্যুৎ উৎপাদন: তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদনও করা হয়, যা স্থানীয় অঞ্চলের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সহায়ক।
পর্যটন আকর্ষণ
তিস্তা ব্যারাজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণগুলির একটি। এর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, নদীর বুকে ব্যারাজের বিশাল অবকাঠামো এবং চারপাশের সবুজ পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। স্থানীয় এবং বিদেশি পর্যটকরা এখানে প্রায়ই বেড়াতে আসেন এবং তিস্তা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
কিভাবে পৌঁছাবেন?
ঢাকা থেকে তিস্তা ব্যারাজে পৌঁছানোর জন্য প্রথমে আপনাকে রংপুর বা লালমনিরহাট যেতে হবে। ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রংপুর বা লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে বাস পাওয়া যায়। এছাড়া, ট্রেনেও রংপুর বা লালমনিরহাট পৌঁছানো যায়। লালমনিরহাট থেকে হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারাজে পৌঁছানোর জন্য স্থানীয় যানবাহন ব্যবহার করা যেতে পারে।
উল্লেখযোগ্য তথ্য: তিস্তা ব্যারাজে যাওয়ার সময় নদীর আশেপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বর্ষাকালে নদীর পানির স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ার সময়।
তিস্তা ব্যারাজ ভ্রমণের সময় যা মাথায় রাখা উচিত
১. প্রাকৃতিক পরিবেশ: তিস্তা ব্যারাজের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সময় পরিবেশের প্রতি সচেতন থাকুন এবং কোন প্রকার আবর্জনা না ফেলুন।
২. নিরাপত্তা: ব্যারাজের আশেপাশের এলাকায় এবং নদীর তীরে চলাচলের সময় নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে চলুন।
তিস্তা ব্যারাজ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেচ প্রকল্প এবং এটি দেশের কৃষিখাতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি, এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত, যেখানে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নদীর বিস্তৃত অবকাঠামো উপভোগ করতে পারবেন।
No Comment! Be the first one.