নুহাশ পল্লী বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যা দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এটি গাজীপুর জেলার পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত এবং হুমায়ূন আহমেদ নিজেই এই পল্লীটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নুহাশ পল্লী তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শিল্পসম্মত স্থাপত্য, এবং হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
নুহাশ পল্লীর ইতিহাস
নুহাশ পল্লী হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এটি মূলত তার লেখালেখির কাজ এবং ছুটি কাটানোর জন্য নির্মিত হয়েছিল। তিনি নুহাশ পল্লীকে তার প্রিয় স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন সাহিত্যিক কাজ সম্পাদন করতেন এবং তার ব্যক্তিগত জীবন কাটাতেন। পল্লীর নামকরণ করা হয় হুমায়ূন আহমেদের বড় ছেলে নুহাশের নামে।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
- প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৯৭
- প্রতিষ্ঠাতা: হুমায়ূন আহমেদ
- অবস্থান: পিরুজালী, গাজীপুর, বাংলাদেশ
প্রধান আকর্ষণ
১. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: নুহাশ পল্লীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর প্রাকৃতিক পরিবেশ। পল্লীর ভেতরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, ফুল, এবং সবুজ মাঠ রয়েছে, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। এখানে সুন্দরভাবে সাজানো বাগান, লেক, এবং খোলা আকাশের নিচে বসার ব্যবস্থা রয়েছে, যা আপনার মনকে প্রশান্তি দেবে।
২. লেখকের ব্যক্তিগত সংগ্রহ: নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ, যেমন তার লেখা বই, চিত্রকর্ম, এবং অন্যান্য নিদর্শন প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও, তার ব্যবহৃত আসবাবপত্র এবং কাজের স্থানও দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
৩. শিল্পকর্ম: নুহাশ পল্লীর ভেতরে বিভিন্ন প্রকারের শিল্পকর্ম এবং স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে, যা হুমায়ূন আহমেদের সৃজনশীলতার প্রতিফলন। পল্লীর ভেতরে বেশ কিছু ভাস্কর্য এবং শিল্পসম্মত স্থাপনা রয়েছে, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
৪. মাকড়সা বাড়ি: নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদ একটি মাকড়সা বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন, যা পল্লীর অন্যতম আকর্ষণ। এটি একটি ছোট্ট বাড়ি, যা মাকড়সার আকারে তৈরি এবং এটি দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
৫. হাসপাতালবাড়ি: এখানে একটি ছোট হাসপাতালবাড়িও রয়েছে, যা হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেছিলেন। এটি মূলত তার পরিবার এবং আশেপাশের লোকদের জন্য নির্মিত হয়েছিল।
বিশেষ অনুষ্ঠান
নুহাশ পল্লীতে প্রতি বছর হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এই সময়ে হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা এবং সাহিত্যপ্রেমীরা এখানে এসে তাকে শ্রদ্ধা জানায় এবং তার স্মৃতিচারণ করে।
কিভাবে পৌঁছাবেন?
ঢাকা থেকে নুহাশ পল্লীতে পৌঁছানো বেশ সহজ। ঢাকার মহাখালী বা গাবতলী বাসস্ট্যান্ড
থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে বাসে করে যেতে পারেন। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে রিকশা বা সিএনজি চালিত অটোরিকশা ব্যবহার করে পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশ পল্লীতে পৌঁছানো যায়। ঢাকা থেকে নুহাশ পল্লীর দূরত্ব প্রায় ৪০-৫০ কিলোমিটার, যা প্রায় ২ ঘণ্টার যাত্রা।
উল্লেখযোগ্য তথ্য: নুহাশ পল্লী দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে, তবে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের সময় আগে থেকে জানতে পারলে ভালো। প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট ফি রয়েছে এবং ফি প্রদানের মাধ্যমে পল্লীটি পরিদর্শন করা যায়।
নুহাশ পল্লী ভ্রমণের সময় যা মাথায় রাখা উচিত
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: পল্লীর পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। আবর্জনা নির্ধারিত স্থানে ফেলুন এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করুন।
২. শালীন পোশাক: পল্লীতে ভ্রমণের সময় শালীন পোশাক পরিধান করা উচিত এবং স্থানীয় রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।
নুহাশ পল্লী হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাহিত্যিক ইতিহাস, এবং শিল্পসম্মত নিদর্শন একে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
No Comment! Be the first one.