বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, যা সাধারণত বরেন্দ্র জাদুঘর নামে পরিচিত, বাংলাদেশের রাজশাহী শহরে অবস্থিত এবং এটি দেশের প্রথম জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। এই জাদুঘরটি বাংলার প্রাচীন ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, এবং শিল্পকলা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।
জাদুঘরের ইতিহাস
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯১০ সালে। এটি মূলত রাজশাহী কলেজের অধ্যাপক রামাপ্রসাদ চন্দ, কুমার শরৎকুমার রায় এবং রায় বাহাদুর সুরেশচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলার প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা এবং গবেষণার মাধ্যমে তা প্রচার করা। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর, যা বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
- প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ
- অবস্থান: রাজশাহী, বাংলাদেশ
- প্রতিষ্ঠাতা: রামাপ্রসাদ চন্দ, কুমার শরৎকুমার রায়, রায় বাহাদুর সুরেশচন্দ্র রায়
জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, প্রাচীন মূর্তি, পাণ্ডুলিপি, এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক সামগ্রীর সংরক্ষণ করে থাকে। এখানে বাংলার প্রাচীন এবং মধ্যযুগের ইতিহাসের উপর আলোকপাত করা হয়।
১. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
জাদুঘরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ। এখানে গৌড়, পান্ডুয়া, পাহাড়পুর, এবং মহাস্থানগড় থেকে প্রাপ্ত প্রাচীন মূর্তি, শিলালিপি, এবং খোদাই করা পাথর প্রদর্শিত হয়। এসব নিদর্শন বাংলার প্রাচীন সভ্যতা, ধর্মীয় সংস্কৃতি, এবং সামাজিক জীবনের প্রতিফলন বহন করে।
২. প্রাচীন মূর্তি
জাদুঘরের একটি বড় অংশে বিভিন্ন ধর্মীয় মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, এবং জৈন ধর্মের মূর্তিগুলো বিশেষত উল্লেখযোগ্য। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো মূর্তি পাল এবং সেন আমলের, যা বাংলার প্রাচীন ধর্মীয় শিল্পকলা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
৩. পাণ্ডুলিপি ও প্রাচীন বই
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে বিভিন্ন প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এবং পুথি সংরক্ষিত আছে, যা বাংলার প্রাচীন সাহিত্য এবং ধর্মীয় চর্চার নিদর্শন। এগুলোর মধ্যে পালি, সংস্কৃত এবং বাংলা ভাষায় রচিত পাণ্ডুলিপি রয়েছে।
৪. তাম্রলিপি ও শিলালিপি
জাদুঘরে সংরক্ষিত তাম্রলিপি এবং শিলালিপিগুলো বাংলার প্রাচীন রাজাদের শাসনকাল এবং তাদের শাসনব্যবস্থার ইতিহাস তুলে ধরে। এসব লিপি বাংলার প্রাচীন রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
জাদুঘরের গুরুত্ব
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর শুধুমাত্র একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণাগার নয়, এটি বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্যের উপর গবেষণা এবং শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। জাদুঘরটি বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলার অতীতকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কিভাবে পৌঁছাবেন?
ঢাকা থেকে রাজশাহী পৌঁছানোর জন্য আপনি বাস, ট্রেন বা ফ্লাইট ব্যবহার করতে পারেন। রাজশাহী শহরের ভেতর জাদুঘরটি কেন্দ্রীয় অবস্থানে অবস্থিত হওয়ায় রিকশা বা সিএনজি ব্যবহার করে সহজেই পৌঁছানো যায়। জাদুঘরটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী কলেজের কাছাকাছি অবস্থিত, যা শহরের অন্যান্য প্রধান স্থাপনার নিকটেই।
উল্লেখযোগ্য তথ্য: জাদুঘরটি প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এখানে প্রবেশের জন্য একটি নামমাত্র প্রবেশ ফি রয়েছে।
ভ্রমণের সময় যা মাথায় রাখা উচিত
১. নীরবতা বজায় রাখা: জাদুঘরের ভেতরে নীরবতা বজায় রাখা উচিত, যাতে অন্য দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীগুলো ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেন।
২. প্রদর্শনীগুলো স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা: প্রদর্শনীগুলো স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা উচিত, যাতে এগুলো সংরক্ষিত থাকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এগুলো দেখতে পারে।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পদ, যা বাংলার প্রাচীন ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন সংরক্ষণ করে। এটি ইতিহাসপ্রেমী এবং গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং যারা বাংলার অতীত সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য অবশ্যই পরিদর্শনযোগ্য।
No Comment! Be the first one.