বাহাদুর শাহ পার্ক, যা পূর্বে ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে পরিচিত ছিল, ঢাকার পুরান ঢাকার একটি ঐতিহাসিক স্থান। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতি বহন করে। পার্কটি ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় অবস্থিত এবং এটি পুরান ঢাকার অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
পার্কের ইতিহাস
বাহাদুর শাহ পার্ক মূলত ১৮৫৮ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং প্রথমে এটি ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে পরিচিত ছিল। এটি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের স্মরণে নির্মিত হয়, যেখানে ভারতীয় সৈন্যরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। যদিও বিদ্রোহ দমন করা হয়েছিল, এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর, পার্কটির নাম পরিবর্তন করে বাহাদুর শাহ পার্ক রাখা হয়, যা সিপাহী বিদ্রোহের নেতা বাহাদুর শাহ জাফরের নামানুসারে রাখা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
- প্রতিষ্ঠাকাল: ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ
- অবস্থান: লক্ষ্মীবাজার, পুরান ঢাকা, বাংলাদেশ
- প্রথম নাম: ভিক্টোরিয়া পার্ক
- বর্তমান নাম: বাহাদুর শাহ পার্ক
পার্কের স্থাপত্য ও স্মৃতিচিহ্ন
বাহাদুর শাহ পার্কের স্থাপত্যশৈলী এবং এর মধ্যে থাকা স্মৃতিচিহ্নগুলো ঢাকার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতিফলন। পার্কটির কেন্দ্রে একটি বড় স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে, যা সিপাহী বিদ্রোহে নিহতদের স্মরণে নির্মিত।
১. স্মৃতিস্তম্ভ
পার্কের কেন্দ্রে অবস্থিত স্মৃতিস্তম্ভটি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে। এটি একটি উচ্চস্তম্ভ, যা পার্কের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে পরিচিত। স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং ভাস্কর্য রয়েছে।
২. পুকুর ও উদ্যান
পার্কের ভেতরে একটি ছোট পুকুর এবং সবুজ উদ্যান রয়েছে, যা পার্কটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এটি ঢাকার নাগরিকদের জন্য একটি প্রধান বিশ্রাম এবং বিনোদনের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৩. প্রাচীন গাছপালা ও বিশ্রামের স্থান
পার্কের চারপাশে বিভিন্ন প্রাচীন গাছপালা রয়েছে, যা পার্কের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করে। পার্কে বসার ব্যবস্থা এবং ছায়াময় বিশ্রামের স্থান রয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি প্রশান্তির স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পার্কের গুরুত্ব
বাহাদুর শাহ পার্ক শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, এটি ঢাকার পুরান ঢাকার একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কেন্দ্র। এটি পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি প্রধান মিলনস্থল এবং উৎসবের সময় এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। পার্কটি ঢাকার ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা এবং স্মৃতির স্মারক হিসেবে পরিচিত।
কিভাবে পৌঁছাবেন?
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে বাহাদুর শাহ পার্কে পৌঁছানো সহজ। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় অবস্থিত পার্কটি রিকশা, সিএনজি বা প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করে সহজেই পৌঁছানো যায়। ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে পার্কটি খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য তথ্য: পার্কটি প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এবং এখানে প্রবেশের জন্য কোনো ফি প্রযোজ্য নয়।
ভ্রমণের সময় যা মাথায় রাখা উচিত
১. পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: পার্কের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা জরুরি। কোন প্রকার আবর্জনা না ফেলুন এবং পার্কের পবিত্রতা বজায় রাখুন।
২. নীরবতা বজায় রাখা: পার্কের ভেতরে নীরবতা বজায় রাখা উচিত, বিশেষত স্মৃতিস্তম্ভের আশেপাশে।
বাহাদুর শাহ পার্ক ঢাকার একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শন, যা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতি বহন করে। এর স্থাপত্যশৈলী, স্মৃতিস্তম্ভ, এবং সবুজ পরিবেশ একে পুরান ঢাকার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ করে তুলেছে। যারা ঢাকার ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে চান, তাদের জন্য বাহাদুর শাহ পার্ক একটি অবশ্যকরণীয় গন্তব্য।
No Comment! Be the first one.