শাকরাইন (Shakrain), যা সাকরাইন নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এটি মাঘ মাসের শেষ দিন অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে পালিত হয়, এবং এটি প্রধানত ঘুড়ি ওড়ানো, আতশবাজি, এবং বর্ণাঢ্য উৎসবের জন্য বিখ্যাত। এই উৎসবটি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শাকরাইনের ইতিহাস
শাকরাইনের উৎপত্তি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না, তবে এটি বহু বছর ধরে পুরান ঢাকার মানুষদের মধ্যে উদযাপিত হয়ে আসছে। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পালিত হওয়ায় এই উৎসবের অন্য নাম “পৌষ সংক্রান্তি”। শাকরাইন মূলত ফসল কাটার মৌসুমের শেষ এবং নতুন ফসলের আগমনের সময় উদযাপিত হয়, যা প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
- উদযাপনের সময়: মাঘ মাসের শেষ দিন (পৌষ সংক্রান্তি)
- অবস্থান: পুরান ঢাকা, বাংলাদেশ
- প্রধান কার্যক্রম: ঘুড়ি ওড়ানো, আতশবাজি, সঙ্গীত, নৃত্য
শাকরাইনের প্রধান কার্যক্রম
১. ঘুড়ি ওড়ানো
শাকরাইনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল ঘুড়ি ওড়ানো। পুরান ঢাকার আকাশ শাকরাইনের দিন রঙ-বেরঙের ঘুড়িতে ভরে ওঠে। ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা, যা স্থানীয় ভাষায় “ঘুড়ি কাটাকাটি” নামে পরিচিত, এটি উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা চেষ্টা করেন অন্যের ঘুড়ি কেটে ফেলার, যা দেখার জন্য হাজারো মানুষ ছাদে জড়ো হয়।
২. আতশবাজি এবং প্রদর্শনী
ঘুড়ি ওড়ানোর পর সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার আকাশ আলোকিত হয় আতশবাজির ঝলকানিতে। বিভিন্ন ধরনের আতশবাজি এবং আলোক প্রদর্শনী শাকরাইন উৎসবকে আরও মনোরম করে তোলে। এই সময়ে পুরান ঢাকার ছাদগুলো আলো এবং আনন্দের ঝলকানিতে ভরে ওঠে।
৩. সঙ্গীত ও নৃত্য
শাকরাইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সঙ্গীত এবং নৃত্য। ছাদে ছাদে ডিজে পার্টি এবং ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের সঙ্গীতের সঙ্গে নাচের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় যুবক-যুবতীরা সঙ্গীতের তালে তালে নৃত্য করেন এবং সারা রাত ধরে উৎসব চলতে থাকে।
৪. বিশেষ খাবার
শাকরাইনের দিন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা বিশেষ খাবারের আয়োজন করে। পিঠা, পায়েস, এবং বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন এই সময়ে তৈরি করা হয় এবং পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই খাবারগুলো উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
শাকরাইনের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
শাকরাইন শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, এটি পুরান ঢাকার মানুষের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সামাজিক বন্ধনের একটি প্রতীক। এই উৎসবের মাধ্যমে পুরান ঢাকার মানুষ একত্রিত হয় এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে উদযাপন করে। এটি স্থানীয়দের জন্য এক নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর একটি উপলক্ষ।
কিভাবে অংশগ্রহণ করবেন?
যদি আপনি শাকরাইন উৎসবে অংশগ্রহণ করতে চান, তবে পুরান ঢাকার যে কোন স্থানে (বিশেষ করে লালবাগ, শাঁখারিবাজার, তানকলে বা সুত্রাপুর এলাকায়) যাওয়া যেতে পারে। শাকরাইনের দিন ছাদে ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো এবং অন্যান্য কার্যক্রম দেখার জন্য স্থানীয়দের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।
উল্লেখযোগ্য তথ্য: শাকরাইনের সময় পুরান ঢাকায় যানজট থাকতে পারে, তাই সময়মতো পৌঁছানোর জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
সতর্কীকরণ
দয়া করে মনে রাখবেন, উৎসবের সময় ভিড় ও আতশবাজির কারণে কিছুটা ঝুঁকি থাকতে পারে। নিরাপদে থাকতে ছাদে দাঁড়ানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।
Brief in English:
Shakrain, also known as Sakrain or Poush Sankranti, is a traditional kite festival celebrated in Old Dhaka. Held on the last day of the Bengali month of Poush, this festival is marked by colorful kite flying, fireworks, music, and dancing. It is a time when the skies of Old Dhaka are filled with vibrant kites, and the rooftops come alive with festivities. Shakrain is more than just a festival; it is a cultural symbol of unity and celebration for the people of Old Dhaka.
No Comment! Be the first one.