সোনারগাঁও জাদুঘর, যা আনুষ্ঠানিকভাবে “বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন” নামে পরিচিত, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সোনারগাঁও অঞ্চলে অবস্থিত। সোনারগাঁও এক সময় বাংলার প্রাচীন রাজধানী ছিল, এবং এই জাদুঘরটি সেই প্রাচীন রাজধানীর ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
জাদুঘরের ইতিহাস
সোনারগাঁও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭৫ সালে, বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে। তিনি বাংলার লোকশিল্প ও কারুশিল্পের সংরক্ষণ এবং প্রচারের লক্ষ্যে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি সোনারগাঁওয়ের প্রাচীন স্থাপত্য, কারুশিল্প, এবং লোকজ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
- প্রতিষ্ঠাতা: জয়নুল আবেদিন, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চিত্রশিল্পী।
- প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৭৫ সাল।
- অবস্থান: সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা বিভাগ।
জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ
সোনারগাঁও জাদুঘর বিভিন্ন ধরণের লোকশিল্প এবং কারুশিল্পের সংগ্রহশালা। এখানে বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন, এবং বিভিন্ন ধরণের লোকজ সামগ্রী প্রদর্শিত হয়।
লোকজ ও কারুশিল্পের সংগ্রহ
সোনারগাঁও জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ হল বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকজ ও কারুশিল্প। এখানে রয়েছে:
- নকশী কাঁথা: বাংলার গ্রামীণ নারীদের দ্বারা তৈরি করা রঙিন ও সৃজনশীল নকশী কাঁথা।
- মাটির তৈরি পুতুল ও খেলনা: বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির খেলনা, যা বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের একটি প্রতিফলন।
- পাটের পণ্য: পাটের তৈরি বিভিন্ন পণ্য, যেমন ব্যাগ, ম্যাট, এবং অন্যান্য গৃহস্থালির জিনিসপত্র।
- কারুশিল্প প্রদর্শনী: বিভিন্ন ধরণের বুনন, বেতের পণ্য, কাঠের কারুকাজ এবং অন্যান্য হস্তশিল্পের প্রদর্শনী।
ঐতিহাসিক নিদর্শন
জাদুঘরে বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রদর্শিত হয়। এখানে রয়েছে:
- মুঘল আমলের স্থাপত্যের নিদর্শন: সোনারগাঁওয়ের প্রাচীন মসজিদ, মাজার এবং অন্যান্য স্থাপত্যের অংশ।
- পাল রাজাদের সময়কার নিদর্শন: প্রাচীন পাথরের মূর্তি এবং অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী।
প্যানেল ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী
জাদুঘরে বাংলার লোকজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে তথ্যচিত্র এবং প্যানেল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দর্শনার্থীরা বাংলার গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারেন।
লোকশিল্প মেলা ও উৎসব
প্রতি বছর সোনারগাঁও জাদুঘরে “লোকশিল্প মেলা” নামে একটি বিশেষ মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের কারুশিল্পীরা তাদের তৈরি পণ্য প্রদর্শন এবং বিক্রি করেন। এই মেলায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত, নৃত্য, এবং নাটকের প্রদর্শনীও অনুষ্ঠিত হয়।
আপনার জন্য একটি টিপ: যদি আপনি লোকশিল্প মেলার সময় জাদুঘর পরিদর্শন করেন, তাহলে আপনি বাংলার স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারবেন।
জাদুঘর পরিদর্শন
সোনারগাঁও জাদুঘর সপ্তাহের ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে। এখানে একটি ছোট প্রবেশমূল্য আছে, যা সংগ্রহশালার রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রদর্শনীর জন্য ব্যবহৃত হয়। জাদুঘরে প্রবেশের সময় শালীন পোশাক পরিধান এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখা প্রয়োজন।
কিভাবে পৌঁছাবেন?
ঢাকা থেকে সোনারগাঁও জাদুঘর পৌঁছানো খুবই সহজ। ঢাকা থেকে সোনারগাঁও যাওয়ার জন্য সড়কপথে বাস, প্রাইভেট কার, বা মাইক্রোবাসে যাত্রা করতে পারেন। ঢাকা থেকে সোনারগাঁওয়ের দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার, যা প্রায় ১ ঘণ্টার যাত্রা।
উল্লেখযোগ্য তথ্য: জাদুঘরে প্রবেশের আগে সময়সূচি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া ভালো, বিশেষ করে উৎসবের সময় ভিড় এড়ানোর জন্য।
সোনারগাঁও জাদুঘর বাংলার প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান, যেখানে তারা বাংলার গৌরবময় অতীত সম্পর্কে জানতে এবং ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের সাথে পরিচিত হতে পারবেন।
No Comment! Be the first one.