লালবাগ কেল্লা, যা ঢাকার লালবাগ দুর্গ নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি ঐতিহাসিক মুঘল দুর্গ। এটি মুঘল স্থাপত্যের একটি অনন্য উদাহরণ এবং ঢাকার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। লালবাগ কেল্লা তার স্থাপত্যশৈলী, ইতিহাস, এবং মুঘল আমলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
কেল্লার ইতিহাস
লালবাগ কেল্লার নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে শাহজাদা আজমের আমলে, যখন তিনি বাংলার সুবাহদার ছিলেন। তবে কেল্লাটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি এবং এটি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। কেল্লাটির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন শাহজাদা আজম এবং বাংলার পরবর্তী সুবাহদার শায়েস্তা খাঁ। শায়েস্তা খাঁর মেয়ের আকস্মিক মৃত্যু (পারী বিবি) এই কেল্লার নির্মাণ বন্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
- প্রতিষ্ঠাতা: মুঘল শাহজাদা আজম
- নির্মাণকাল: ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দ
- অবস্থান: লালবাগ, ঢাকা, বাংলাদেশ
স্থাপত্যশৈলী
লালবাগ কেল্লা মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি চমৎকার উদাহরণ। কেল্লাটি আয়তাকার আকৃতির এবং এর চারপাশে একটি উঁচু প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত। কেল্লার অভ্যন্তরে তিনটি প্রধান স্থাপনা রয়েছে: কেল্লার প্রধান প্রবেশদ্বার, পরী বিবির মাজার, এবং শাহী মসজিদ। প্রতিটি স্থাপনাই মুঘল স্থাপত্যশৈলীর জটিল নকশা এবং কারুকাজে সজ্জিত।
প্রধান আকর্ষণ
১. পরী বিবির মাজার: লালবাগ কেল্লার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো পরী বিবির মাজার। মাজারটি সাদা মার্বেলের তৈরি এবং এর অভ্যন্তরে রয়েছে পরী বিবির সমাধি। পরী বিবি ছিলেন শায়েস্তা খাঁর কন্যা, যিনি অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মাজারটির স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর এবং মুঘল আমলের কারুকাজে সমৃদ্ধ।
২. শাহী মসজিদ: কেল্লার ভেতরে অবস্থিত শাহী মসজিদটি মুঘল স্থাপত্যের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। মসজিদটির ছাদে তিনটি গম্বুজ রয়েছে এবং দেয়ালে জটিল খোদাই করা হয়েছে। মসজিদটি প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত হত এবং এখনও প্রার্থনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৩. দুর্গের প্রধান প্রবেশদ্বার: লালবাগ কেল্লার প্রধান প্রবেশদ্বারটি একটি বিশাল খিলান দিয়ে তৈরি এবং এর উপরে একটি বড় গম্বুজ রয়েছে। প্রবেশদ্বারটি মুঘল স্থাপত্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ বহন করে এবং কেল্লার অভ্যন্তরে প্রবেশের প্রধান পথ।
কেল্লার বাগান ও প্রাচীর
লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে একটি সুন্দর বাগান রয়েছে, যা ফুল, গাছপালা এবং হাঁটার পথ নিয়ে গঠিত। কেল্লার চারপাশে একটি উঁচু প্রাচীর রয়েছে, যা কেল্লাটিকে সুরক্ষিত করে রাখে। প্রাচীরের চারপাশে আরও ছোট ছোট স্থাপনা রয়েছে, যা মুঘল স্থাপত্যের অংশ।
লালবাগ কেল্লার বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে লালবাগ কেল্লা বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এবং ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। কেল্লার অভ্যন্তরে একটি ছোট জাদুঘরও রয়েছে, যেখানে মুঘল আমলের বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শিত হয়।
পর্যটকদের জন্য তথ্য
লালবাগ কেল্লা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এখানে প্রবেশের জন্য একটি নামমাত্র প্রবেশ ফি রয়েছে। কেল্লার অভ্যন্তরে ছবি তোলার সুযোগ রয়েছে, তবে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ছবি তোলার জন্য অনুমতি প্রয়োজন হতে পারে।
কিভাবে পৌঁছাবেন?
লালবাগ কেল্লা ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত এবং শহরের যে কোনো স্থান থেকে রিকশা, সিএনজি বা প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করে সহজেই পৌঁছানো যায়। এটি পুরান ঢাকার একটি প্রধান পর্যটন আকর্ষণ এবং সড়কপথে ভালোভাবে সংযুক্ত।
উল্লেখযোগ্য তথ্য: লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনের সময় শালীন পোশাক পরিধান করা এবং স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলা উচিত।
ভ্রমণের সময় যা মাথায় রাখা উচিত
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: কেল্লার ভেতরে কোন প্রকার আবর্জনা না ফেলুন এবং স্থাপনাগুলোর পবিত্রতা বজায় রাখুন।
২. নিরাপত্তা: কেল্লার উঁচু স্থান বা সিঁড়িতে চলাফেরার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
লালবাগ কেল্লা ঢাকার অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং মুঘল স্থাপত্যের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, মনোমুগ্ধকর স্থাপত্যশৈলী, এবং মুঘল আমলের স্মৃতি একে পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলেছে। লালবাগ কেল্লার ভ্রমণ আপনাকে বাংলার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাথে পরিচিত করবে।
No Comment! Be the first one.