আলেকজান্ডার ক্যাসেল, (Alexander Castle) ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা ময়মনসিংহ জেলার প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপনের জন্য ১৮৮৯ সালে মহারাজা সুর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণে প্রায় ৪৫,০০০ টাকা ব্যয় হয়েছিল এবং স্থানীয়ভাবে “লোহার কুঠি” নামে পরিচিত ছিল, কারণ এর নির্মাণে প্রচুর পরিমাণে লোহা ব্যবহার করা হয়েছিল।
ইতিহাস:
আলেকজান্ডার ক্যাসেলটি মূলত ময়মনসিংহ জেলার প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপনের জন্য নির্মিত হয়েছিল। এটি নির্মাণে ব্যবহৃত লোহা এবং কাঠের কারণে স্থানীয়ভাবে “লোহার কুঠি” নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে, এটি ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের সম্মানে “আলেকজান্ডার ক্যাসেল” নামে অভিহিত হয়।
স্থাপত্যশৈলী:
আলেকজান্ডার ক্যাসেলটি দুটি তলা বিশিষ্ট একটি ভবন, যা ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর সাথে স্থানীয় উপকরণের সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছে। এতে দুটি গ্রীক মূর্তি প্রবেশদ্বারের উভয় পাশে স্থাপিত ছিল, যদিও বর্তমানে সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটি ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত এবং বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে উঁচু ভিত্তির উপর নির্মিত হয়েছে।
প্রসিদ্ধ অতিথিরা:
আলেকজান্ডার ক্যাসেলে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অবস্থান করেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহ সফরে এসে এখানে অবস্থান করেন। en.wikipedia.org
- মহাত্মা গান্ধী: একই বছরে ময়মনসিংহ সফরে এসে এখানে অবস্থান করেন।
- লর্ড কার্জন, চিত্তরঞ্জন দাস, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা, মাওলানা ওয়াজেদ আলী খান পান্নি, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এখানে অবস্থান করেছেন।
বর্তমান অবস্থা:
বর্তমানে, আলেকজান্ডার ক্যাসেলটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবনটি সংরক্ষণ ও সংস্কারের প্রয়োজন, কারণ এর দ্বিতীয় তলা বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে না এবং ভবনটি ধ্বংসের পথে রয়েছে।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ আসার জন্য বাস বা ট্রেন ব্যবহার করতে পারেন। ময়মনসিংহে পৌঁছানোর পর, সিএনজি বা রিকশা নিয়ে শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত আলেকজান্ডার ক্যাসেলে পৌঁছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা:
ময়মনসিংহ শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে, যেখানে আপনি আরামদায়কভাবে থাকতে পারেন।
খাবারের ব্যবস্থা:
ময়মনসিংহ শহরে বিভিন্ন ধরনের খাবারের রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে রয়েছে, যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক খাবার পাওয়া যায়।
সতর্কতা:
- সংগ্রহশালায় প্রবেশের সময় স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলুন।
- ভবনের ঐতিহাসিক মূল্য বিবেচনায়, সংরক্ষণে সহায়তা করুন এবং কোনো ক্ষতি করবেন না।
উপসংহার:
আলেকজান্ডার ক্যাসেল ময়মনসিংহের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা তার স্থাপত্যশৈলী এবং ইতিহাসের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা উচিত।
ফিচার ইমেজ: ফারুখ আহমেদ ভূঁইয়া
No Comment! Be the first one.