কমলা রানী দিঘী (Komola Ranir Dighi) নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জলাশয়, যা স্থানীয় জনগণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
ইতিহাস:
প্রচলিত কাহিনিতে বলা হয়, ১৫ শতকের শেষভাগে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকি নাথ কমলা দেবীকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান রঘুনাথের জন্ম হয়। প্রজাদের পানির অভাব মেটানোর জন্য রাজা একটি বিশাল দিঘী খনন করেন, কিন্তু তাতে পানি উঠেনি। রাণী কমলা দেবী দিঘীর মাঝখানে পূজা দিতে বসেন, ফলে পানি উঠতে শুরু করে এবং দিঘী পূর্ণ হয়। এ সময় রাণী পানিতে ডুবে যান, যা স্থানীয় জনগণের কাছে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
কিভাবে যাবেন:
- বাসে: ঢাকা থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে দুর্গাপুর পৌঁছাতে পারেন। সেখানে থেকে সিএনজি বা রিকশায় বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হবে। দুর্গাপুর থেকে বিরিশিরি পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া প্রায় ৮০-১০০ টাকা।
- ট্রেনে: ঢাকা থেকে হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্যামগঞ্জ স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সিএনজি বা রিকশায় বিরিশিরি যেতে পারেন। ট্রেনের ভাড়া প্রায় ১০০-১৫০ টাকা।
থাকার ব্যবস্থা:
- দুর্গাপুরে: জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াইএমসিএ) রেস্ট হাউস, YWCA গেস্ট হাউজ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী গেস্ট হাউজ ইত্যাদি রয়েছে। মধ্যম মানের হোটেল হিসেবে স্বর্ণা গেস্ট হাউস, হোটেল সুসং, বিরিশিরি রিসোর্ট, হোটেল জবা, নদীবাংলা গেস্ট হাউজ উল্লেখযোগ্য।
খাবারের ব্যবস্থা:
বিরিশিরিতে হালকা খাবার সঙ্গে রাখা ভালো, কারণ এখানে খাবারের দোকান সীমিত। দুর্গাপুর বাজারে নেত্রকোণার বিখ্যাত বালিশ মিষ্টির স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
দর্শনীয় স্থান:
- কমলা রানী দিঘী: দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের কাছে অবস্থিত এই দিঘীটি স্থানীয় জনগণের সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
- বিরিশিরি: এখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক একাডেমী, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
- সোমেশ্বরী নদী: নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থানটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত।
- কমলারাণী দীঘি: এটি একটি প্রাচীন দীঘি, যা স্থানীয়দের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
কমলা রানী দিঘী তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। প্রকৃতিপ্রেমী ও ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
ফিচার ইমেজ: সোলাইমান খান
No Comment! Be the first one.